খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষককে অপসারণ ও এক শিক্ষককে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন উচ্চ আদালত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে তিন শিক্ষকের অপসারণ ও বরখাস্তের বৈধতা প্রশ্নে দেওয়া রুল যথাযথ ঘোষণা করে বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়।
শিক্ষার্থীদের বেতন-ফি কমানো, তাদের আবাসন সংকটের সমাধানসহ পাঁচ দাবিতে একাত্মতা প্রকাশের অভিযোগে গত ২৩ জানুয়ারি তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ডিসিপ্লিনের সহকারী শিক্ষক মো. আবুল ফজলকে বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া একই বিভাগের শিক্ষক শাকিলা আলম এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের শিক্ষক হৈমন্তি শুক্লা কাবেরীকে অপসারণ করা হয়।
এ-সংক্রান্ত চিঠি ইস্যু করা হয় ২৮ জানুয়ারি। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিশ দেন তিন শিক্ষক। নোটিশের জবাব না পাওয়ায় ২৮ জানুয়ারি ইস্যুকৃত চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন তারা। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে রুল ও স্থিতাবস্থা দেয় হাইকোর্ট। এর ধারাবাহিকতায় রুলের শুনানি শেষে এ রায় হয়। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার রিপন কুমার বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।
জানা গেছে, ২০২০ সালের ১ ও ২ জানুয়ারি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ৫ দফা দাবিতে আন্দোলন করেন। ওই ৫ দফা দাবির মধ্যে ছিল- বেতন কমানো, আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করা, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অবকাঠামো নির্মাণ ও ছাত্রবিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। সে সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছিলেন ওই তিন শিক্ষক। তাদের গত বছরের ১৩ অক্টোবর কারণ দর্শানো নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এতে বলা হয়েছিলো, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা রকমের মিথ্যা তথ্য প্রদান, কুৎসা রটানো ও উসকানিমূলক তথ্য প্রচার করেছিলেন তারা। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সহমত পোষণ করার জন্য অন্যান্য শিক্ষকদের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছিলেন। শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো থাকা সত্ত্বেও তারা নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে ওই শিক্ষকরা কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দেন।
তবে তারা কোনো রকম দুঃখ বা ক্ষমা প্রকাশ করেননি। এরপর ২০২১ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ২১২তম সভায় পূর্ববর্তী ২১১তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত এবং তিন শিক্ষককে দেওয়া আত্মপক্ষ সমর্থনে জবাব নিয়ে দীর্ঘ পর্যালোচনা করা হয়। শেষে সিন্ডিকেট তাদের চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত এবং অপসারণের সিদ্ধান্তের অনুমোদন দেয়।
তথ্যসূত্র: দেশ রূপান্তর
Leave a Reply